বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির উদ্বেগজনক বৃদ্ধি: একটি সার্বিক পর্যালোচনা

  



বর্তমান বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং অভ্যন্তরীণ চাপের কারণে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির হার উদ্বেগজনক স্তরে পৌঁছেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ৯.৭৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর প্রধান কারণ হিসেবে খাদ্যপণ্যের উচ্চমূল্যকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি ১০.৬৫ শতাংশ এবং খাদ্যবহির্ভূত খাতে ৮.৮৬ শতাংশ।


সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রাখা সম্ভব হয়নি, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। খাদ্যপণ্য, জ্বালানি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ফলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। এই অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্য থাকলেও, আগস্ট মাসে এটি ১০.৪৯ শতাংশে পৌঁছেছে, যা দুশ্চিন্তার কারণ।


বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির চারটি কারণ চিহ্নিত করেছে: অভ্যন্তরীণ জ্বালানিমূল্যের বৃদ্ধি, দুর্বল অর্থনীতি, টাকার অবমূল্যায়ন এবং কমে যাওয়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। অনিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থা মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির একটি অন্যতম কারণ।


এক্ষেত্রে একটি সুদূরপ্রসারী ও সুষম অর্থনৈতিক নীতিমালার প্রণয়নের প্রয়োজন রয়েছে, যা মূল সমস্যাগুলোকে গভীরভাবে বিবেচনায় নেবে।


 সুপারিশমূলক পদক্ষেপ:


1. উৎপাদনশীল খাতের উন্নয়ন: কৃষির উন্নয়ন এবং উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্যদ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। এ জন্য সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

2. রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা: বাজেট ঘাটতি কমাতে কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন এবং রাজস্ব আহরণের দক্ষতা বাড়াতে হবে।


3. মুদ্রানীতি ও বাণিজ্যনীতি পর্যালোচনা: বাংলাদেশ ব্যাংককে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সতর্কতার সাথে নীতি প্রণয়ন করতে হবে, এবং বৈদেশিক বাণিজ্যের ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে।

4. সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সম্প্রসারণ: নিম্ন আয়ের জনগণের জন্য সহায়তা ও ভর্তুকি বৃদ্ধি অপরিহার্য।


5. মার্কেট নিয়ন্ত্রণ: বাজারে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ এবং মজুদদারির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 

 মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে একটি সমন্বিত দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই নীতিমালার বাস্তবায়ন সময়ের দাবি। সরকারের উচিত মুদ্রানীতি, রাজস্বনীতি এবং বাজার ব্যবস্থাপনাকে সমন্বিতভাবে পরিচালনা করা, যাতে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখা যায়।

Post a Comment

Previous Post Next Post