বিসিএস আন্তক্যাডার বৈষম্যের অবসান হবে কবে?

  

বিসিএস ক্যাডারের পদোন্নতির নৈরাজ্য আজও দূর করা সম্ভব হয়নি। এক ক্যাডারের সঙ্গে অন্য ক্যাডারের মধ্যে যে বৈষম্য বিদ্যমান, তা সরকারি চাকরির একটি লজ্জাজনক অংশ। একই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, একই পরীক্ষা, এবং একই সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে একই দিনে যোগদান করা কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈষম্যকে কোনোভাবেই সুস্থ পদ্ধতি বলা যায় না। এই অসুস্থ পদ্ধতি দূর করার জন্য আগের সরকারগুলো কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।


 রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট


রাজনৈতিক সরকারের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বা ভিন্নমত দমনের লক্ষ্যে যারা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সহযোগিতা করেন, সেই ক্যাডারটি সরকারির কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। বিসিএস প্রশাসন ও পুলিশ ক্যাডার এই বাস্তবতায় সবচেয়ে প্রাধিকারভুক্ত। রাজনৈতিক শক্তির সহায়তা পেয়ে, এই দুই ক্যাডারের কর্মকর্তারা তরতর করে পদোন্নতি লাভ করেন। অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা নিজেদের অবস্থানকে লজ্জাজনক মনে করেন, বিশেষ করে যখন তারা জানেন যে, তারা বহু বছর ধরে পদোন্নতির জন্য অপেক্ষা করছেন।


 পুলিশ ক্যাডারের গুরুত্ব


বিগত ১৫ বছরে পুলিশ ক্যাডার বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তারা সরকারের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করেছে এবং মাঠে যেকোনো বিরুদ্ধ মতকে দমনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। বিনা ভোটে ক্ষমতায় আসীন হওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশি সহায়তা গ্রহণ করা হয়েছে, যা সরকারের পুলিশের ওপর নির্ভরশীলতা আরও বাড়িয়েছে।


 পদোন্নতি ও সুযোগ-সুবিধা


প্রশাসন ও পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে যে বৈষম্য বিদ্যমান, তা উল্লেখযোগ্য। যেমন, প্রশাসন ক্যাডারের উপসচিবদের জন্য ৩০ লাখ টাকা সুদমুক্ত ঋণ এবং মাসিক ৫০ হাজার টাকা অতিরিক্ত সুবিধা রয়েছে। কিন্তু একই গ্রেডের অন্যান্য কর্মকর্তাদের জন্য এই ধরনের সুবিধা নেই। 


 বৈষম্য দূরীকরণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ


বর্তমান সরকার যদি সত্যিই বৈষম্য দূর করতে চায়, তবে কেবল প্রশাসন ও পুলিশ ক্যাডারের মধ্যে বৈষম্য নয়, অন্যান্য ক্যাডারগুলোর মধ্যে বৈষম্যও দূর করতে হবে। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের হাতে অন্যান্য ক্যাডারের পদোন্নতি নির্ভর করে, যা বৈষম্য বৃদ্ধি করছে। 


উদাহরণস্বরূপ, শিক্ষা ক্যাডারের সর্বোচ্চ পদোন্নতি হলো অধ্যাপক ৪ নম্বর গ্রেড, অথচ প্রশাসন ক্যাডার ৪ ধাপ উপরে অবস্থান করছে। স্বাস্থ্য ক্যাডারের ৫ শতাংশ চিকিৎসকও ৩ নম্বর গ্রেডে যেতে পারেন না, যা অন্য ক্যাডারগুলোর জন্য অত্যন্ত সমস্যাজনক।


 পদোন্নতির নীতি ও সমতা


বৈষম্য দূর করতে হলে অনেক ক্যাডারে এক বা একাধিক পদোন্নতি দিতে হবে। যদিও শতভাগ সমতা বিধান করা কঠিন, তবে সব ক্যাডারের জন্য ন্যায্য ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব। বিসিএসে ব্যাচভিত্তিক জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণের রীতি পরিবর্তন করতে হবে। একই বিসিএসের কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈষম্য দূর করতে হবে।


 প্রশাসনিক সংস্কার


সব মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের একচেটিয়া অধিকার বন্ধ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাকে সর্বোচ্চ পদে আসীন করতে হবে।

 চূড়ান্ত কথা


সর্বোপরি, একটি কার্যকর ও ন্যায্য প্রশাসনিক কাঠামো গড়তে হলে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করা জরুরি। যদি এসব উদ্যোগ গ্রহণ করা না হয়, তবে বিসিএস ক্যাডারের আন্তক্যাডার বৈষম্য অব্যাহত থাকবে এবং এটি সরকারের সামগ্রিক কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post