শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র বিষয়ে এখন কী বলছেন রাষ্ট্রপতি


গত ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণবিক্ষোভের মুখে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করেন। তার এই পদক্ষেপের পর রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন জাতির উদ্দেশে এক ভাষণে জানান যে, শেখ হাসিনা তার পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দিয়েছেন এবং তিনি সেটি গ্রহণ করেছেন। তবে, শনিবার (১৯ অক্টোবর) মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি বলেন, "তিনি শুনেছেন যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, তবে তার কাছে এ সংক্রান্ত কোনো দালিলিক প্রমাণ বা নথিপত্র পৌঁছায়নি।"


**পদত্যাগপত্রের খোঁজে রাষ্ট্রপতির অনুসন্ধান**  

সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরী জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র যদি সত্যিই জমা দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে তার অনুলিপি কোথাও না কোথাও সংরক্ষিত থাকার কথা। তিনি আরও বলেন, গত তিন সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন জায়গায় অনুসন্ধান চালানোর পরও এর খোঁজ পাওয়া যায়নি। এমনকি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাথে যোগাযোগ করা হয়, যেখানে সাধারণত প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র সংরক্ষিত থাকে, কিন্তু সেখানেও কিছু পাওয়া যায়নি। 


**রাষ্ট্রপতির বিবৃতিতে অস্বস্তি**  

রাষ্ট্রপতি নিজেও বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট অস্বস্তিতে ছিলেন। তিনি বলেন, "৫ আগস্ট সকালে, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে ফোন আসে, জানানো হয় যে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে আসবেন। কিন্তু ঘণ্টাখানেক পর আবার ফোন আসে, জানানো হয় তিনি আসছেন না। এরপর একে একে সব কিছু অস্থির হতে থাকে। আমি কোনো গুজবে বিশ্বাস করতে পারি না, তাই সেনাপ্রধান জেনারেল আদিলকে নির্দেশ দিই বিষয়টি খোঁজ নিতে। কিন্তু সেনাপ্রধানের কাছ থেকেও কোনো নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি। একসময় খবর আসে, প্রধানমন্ত্রী দেশ ছেড়ে চলে গেছেন।"

**অবশেষে, রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত**  

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, "এ সময় আমি সেনাপ্রধানের সাথে আলোচনা করে জানতে চেয়েছিলাম, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন কি না, কিন্তু তিনি জানিয়েছিলেন, 'শুনেছি, তিনি পদত্যাগ করেছেন, তবে হয়তো সময় পাননি পদত্যাগপত্র পাঠানোর।' এরপর একদিন মন্ত্রিপরিষদ সচিব এসে পদত্যাগপত্রের কপি সংগ্রহ করতে চান, কিন্তু আমি তাকে বললাম, আমি নিজেও সেটা খুঁজছি।"  


**সুপ্রিম কোর্টের মতামত**  

এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন যে, ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আর কোনো বিতর্কের সুযোগ না থাকুক। এজন্য তিনি সুপ্রিম কোর্টের মতামত চেয়ে একটি রেফারেন্স পাঠান। ৮ আগস্ট, প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ তাদের মতামত প্রকাশ করেন। এতে বলা হয়, সাংবিধানিক শূন্যতা দূর করতে এবং নির্বাহী কার্যক্রম সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা যেতে পারে। এছাড়া, প্রেসিডেন্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টামণ্ডলীকে শপথবাক্য পাঠ করাতে পারবেন।


**সংক্ষেপে**  

শেখ হাসিনার দেশত্যাগ এবং তার পদত্যাগের বিষয়ে সৃষ্টি হওয়া নানা ধরণের অনিশ্চয়তা এবং রাষ্ট্রপতির বক্তব্য এক বিষয়ের প্রতি স্পষ্ট দৃষ্টি আকর্ষণ করে, তা হলো—তৎকালীন সরকারে ব্যাপক রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনের প্রেক্ষিতে সাংবিধানিক শূন্যতা মোকাবেলা করার জন্য অদূর ভবিষ্যতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা।

Post a Comment

Previous Post Next Post