আলফ্রেড নোবেল, অস্ত্র ও গোলাবারুদের ব্যবসার মাধ্যমে বিপুল অর্থ-সম্পত্তির মালিক হন, পরিণত হন বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিতে। যদিও ব্যক্তিগত জীবনে একাকিত্বে ভোগা নোবেল কখনো বিয়ে করেননি।
নোবেল একসময় নিঃসঙ্গতার দুঃখে কবিতা লিখতে শুরু করেন। ঠিক তখনই একটি পত্রিকায় ভুলবশত তাঁর মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয়, যেখানে তাঁকে ‘মৃত্যুর কারবারি’ উপাধিতে আখ্যায়িত করা হয়। এই ঘটনা তাঁর মনোজগতে বড় পরিবর্তন আনে।
১৮৭৬ সালে, ৪৪ বছর বয়সে, প্যারিসে বসবাসরত নোবেল একজন সহকারী খুঁজতে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেন। কিছুদিন পর বার্থা ফন কিনস্কি নামে একজন স্মার্ট নারী তাঁর সাক্ষাৎকার দিতে আসেন। প্রথম দেখাতেই নোবেল বার্থার প্রেমে পড়েন। কিন্তু বার্থা ইতোমধ্যে অন্য একজনের সঙ্গে বাগদান সেরে ফেলেছিলেন। তবুও দু’জনের মধ্যে চিঠির মাধ্যমে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যা আমৃত্যু বজায় ছিল।
পরবর্তীতে, বার্থা যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন এবং তাঁর লেখনীর মাধ্যমে সেই বার্তা ছড়িয়ে দেন। নোবেলও তাঁকে আর্থিক সহযোগিতা করেন। অথচ নিজে অস্ত্র ব্যবসার সাথে যুক্ত ছিলেন।
নোবেলের জীবনের মোড় ঘুরে যায় যখন তাঁর ভাইয়ের মৃত্যুকে ভুলবশত তাঁর মৃত্যুসংবাদ হিসেবে প্রকাশ করা হয়। তিনি উপলব্ধি করেন, মৃত্যুর পর তাঁকে ‘মৃত্যুর কারবারি’ হিসেবে স্মরণ করা হবে। এ চিন্তাই তাঁকে অনুপ্রাণিত করে মানবকল্যাণে তাঁর সম্পদ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিতে।
১৮৯৫ সালে নোবেল তাঁর উইল করে যান, যেখানে তিনি তাঁর সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত আয় দিয়ে প্রতিবছর বিজ্ঞান, চিকিৎসা, সাহিত্য ও শান্তিতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য পুরস্কার দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। ১৮৯৬ সালে নোবেলের মৃত্যুর পর, তাঁর সমস্ত সম্পত্তি নোবেল ফাউন্ডেশনের অধীনে চলে যায় এবং ১৯০১ সালে প্রথমবারের মতো নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়।
১৯০৫ সালে বার্থা ফন কিনস্কি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান, যা আলফ্রেড নোবেলের একসময়ের প্রেমিকা ও বন্ধুর জন্য এক বিশাল স্বীকৃতি।