Home শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা, মেধাবীরা এ পেশায় যোগদানে কেন আগ্রহ হারাচ্ছে byISMAIL -October 05, 2024 0 শিক্ষকতাপ্রতীকী ছবিসূত্র : প্রথম আলো ‘The First Teacher’ (প্রথম শিক্ষক) চিঙ্গিজ আইত্মাতভ রচিত একটি মাস্টারপিস, যা কিরগিজ অঞ্চলের একটি ছোট গ্রামকে কেন্দ্র করে লেখা। উপন্যাসটির মূল বিষয় হলো শিক্ষার প্রভাব এবং একজন আদর্শ শিক্ষকের একজন শিক্ষার্থীর জীবনে আনা পরিবর্তন। এখানে একজন তরুণ শিক্ষকের কাহিনী, যিনি রাশিয়ান বিপ্লবের পরে কিরগিজস্তানের একটি দূরবর্তী গ্রামে কাজ করেন। তিনি গ্রামের শিশুদের শিক্ষিত করার জন্য সংগ্রাম করেন, বিশেষত একটি কিশোরী মেয়ে আলতিনাই-এর জীবনে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে সক্ষম হন। আলতিনাই শিক্ষার মাধ্যমে ধীরে ধীরে তার জীবনের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে এবং একটি সফল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলে।উপন্যাসটি শিক্ষকের আত্মত্যাগ, শিক্ষার পরিবর্তনশীল শক্তি এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিবন্ধকতাগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করার গল্প তুলে ধরে। গত শতাব্দীর গোড়া থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শিক্ষকদের প্রতি সম্মান জানাতে ‘শিক্ষক দিবস’ পালনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিক্ষক দিবস বিভিন্ন তারিখে পালিত হয়, এবং প্রতিটি দেশের ঐতিহ্য ও ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করে বিশেষ একটি দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশ ভারত প্রথাগতভাবে আষাঢ় (জুন–জুলাই) মাসের পূর্ণিমায় গুরুপূর্ণিমা পালন করে। তবে দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি এবং বিশিষ্ট দার্শনিক সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণের জন্মদিন (৫ সেপ্টেম্বর) উপলক্ষে ১৯৬২ সাল থেকে ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। রাধাকৃষ্ণাণ নিজেও শিক্ষক ছিলেন এবং তাঁর শিক্ষাদান পদ্ধতি ও দৃষ্টিভঙ্গি ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। প্রতিবছরের ৫ অক্টোবর ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ পালিত হলেও শিক্ষকদের বেতন, পদোন্নতি, বদলি, অর্জিত ছুটি, পেনশন এবং যাতায়াতের সুযোগের উন্নয়ন না হওয়া, এবং সামাজিকভাবে মূল্যায়ন কমে যাওয়ার কারণে মেধাবীরা এ পেশায় যোগদানে আগ্রহ হারাচ্ছে।যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৫৩ সালে প্রথমবারের মতো ‘শিক্ষক প্রশংসা দিবস’ পালিত হয়। ১৯৮৫ সালে জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা সমিতি (NEA) মে মাসের প্রথম সপ্তাহকে শিক্ষক প্রশংসা সপ্তাহ হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৮৫ সালে চীন ১০ সেপ্টেম্বরকে শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। মালয়েশিয়ায় ১৯৫৬ সালের ১৬ মে ‘রাজা রিপোর্ট’ প্রকাশিত হয়, যা দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করে, এবং সেই স্মরণে ১৯৭২ সাল থেকে ১৬ মে শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হয়।রাশিয়ায় ১৯৯৪ সালে ইউনেসকোর সঙ্গে সংগতি রেখে ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত হতে শুরু করে। দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৫ মে পালিত হয় কোরিয়ার প্রখ্যাত রাজা সেজংয়ের জন্মদিন, যিনি কোরিয়ান বর্ণমালা হাংগুল প্রবর্তন করেছিলেন। থাইল্যান্ডে ১৯৫৭ সালের ১৬ জানুয়ারি শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।বিশ্ব শিক্ষক দিবস ১৯৯৫ সালের ৫ অক্টোবর থেকে পালিত হয়ে আসছে। জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (UNESCO) এই দিনটি উদ্যাপনের জন্য প্রথম আবেদন করে। এর পেছনে একটি বড় কারণ হলো শিক্ষকদের শ্রমকে স্বীকৃতি দেওয়া। শিক্ষক একটি সুশিক্ষিত সমাজ গঠনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। তাই এই দিবস পালনের আবেদন করা হয়েছিল। রাষ্ট্রসংঘে ১৯৯৪ সালে শিক্ষক দিবস পালন করার আবেদন গৃহীত হয় এবং তার পর থেকে প্রতিবছর এটি পালন করা হচ্ছে।শিক্ষকদের কাজের পরিবেশ, অধিকার এবং সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ১৯৬৬ সালের ৫ অক্টোবর প্যারিসে একটি সুপারিশ পাস হয়। এ স্মরণে, বিশ্ব শিক্ষক দিবসকে ৫ অক্টোবর পালনের দিন হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। এদিন শিক্ষক দিবস বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে উদ্যাপন করা হয়, যেমন—শিক্ষকদের সম্মান জানিয়ে পুরস্কার প্রদান, বিশেষ সেমিনার ও আলোচনা সভা, শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং সামাজিক মাধ্যমে শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ।বাংলাদেশেও ২০০৩ সালে জাতীয় শিক্ষক দিবস চালু হয়, যা বর্তমানে প্রতিবছরের ৫ অক্টোবর পালিত হচ্ছে। তবে শিক্ষকদের বেতন ও সামাজিক মূল্যায়নের ঘাটতির কারণে মেধাবীরা এ পেশায় যোগদানে আগ্রহ হারাচ্ছে। আধুনিক রাষ্ট্র বিনির্মাণে শিক্ষকতাকে আকর্ষণীয় পেশায় রূপান্তরের পদক্ষেপের অপেক্ষায় রয়েছেন বাংলার শিক্ষক সমাজ। Facebook Twitter