জুলাই বিপ্লব: এক নতুন গণআন্দোলনের গল্প

  



বিপ্লব হচ্ছে রাজনৈতিক ক্ষমতা বা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে মৌলিক পরিবর্তন, যা সাধারণত দ্রুত ঘটে। ১৮৩০ সালের ফ্রান্সের জুলাই বিপ্লব যেমন ইতিহাসের পাতায় স্থান পেয়েছে, তেমনি ২০২৪ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশেও এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। কোটা সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে ‘বাংলা ব্লকেড’ শব্দটি ঘিরে ছাত্রজনতার ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ লক্ষ্য করা গেল।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে বেজে উঠল প্রতিবাদী সুর। হাজারো তরুণ সুর মিলাল:


তুমি কে, আমি কে 

রাজাকার, রাজাকার!

 কে বলেছে, কে বলেছে

 স্বৈরাচার, স্বৈরাচার!”


পুলিশের গুলিতে শহীদ আবু সাঈদের স্মৃতিতে বাংলার চেতনায় জেগে উঠল গণজাগরণ। সরকার বুঝতে পারছিল না, তাদের শাসন কতটা ঝুঁকির মধ্যে। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর অযোগ্যতা আর সরকারের অদূরদর্শিতার বিরুদ্ধে হাজারো তরুণ দাঁড়িয়ে গেল।


প্রতিবাদীদের মধ্যে শব্দের শক্তি ছিল প্রবল। ছাত্রদের মুখে উঠল:


“আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব চাই!”


এছাড়া, দেয়ালে লেখা গ্রাফিতিগুলো প্রতিবাদের ভাষা হয়ে উঠল:


সুবোধ তুই পালিয়ে যা, এখন সময় পক্ষে না! 

 আসছে ফাগুন, আমরা হব দ্বিগুণ! 

 ব্লাডি জুলাই! 

 আমি মেট্রোরেল হতে চেয়েছিলাম, খোদা আমাকে ছাত্র বানাল!


উপাচার্যদের নির্লিপ্ততা আর প্রশাসনিক ব্যর্থতা জনগণের ক্ষোভকে বাড়িয়ে তুলল। গণজাগরণে সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে শিক্ষাবিদ এবং সমাজের নানা স্তরের মানুষ একসঙ্গে প্রতিরোধের তাগিদ দিল।


শিক্ষকদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তারা ছাত্রদের উৎসাহিত করতে সোশ্যাল মিডিয়ায় শক্তিশালী বার্তা ছড়িয়ে দিলেন। আন্দোলনকারীদের সমর্থনে এগিয়ে এলেন শিক্ষাবিদরা, যাঁদের কণ্ঠে প্রতিশ্রুতি:


“**মিছিল কোনো দিন ভুলপথে যায় না,  

মিছিল পথ গড়ে দেয়!**”


এই বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে, জনমত তৈরি হলো, যা স্বৈরাচারী সরকারের পতনের মূল ভিত্তি গড়ে তুলল। ছাত্র–জনতা একত্রিত হয়ে নতুন রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটাল, যা সমগ্র দেশের ভবিষ্যতকে বদলে দিতে সক্ষম হলো।


২০২৪ সালের জুলাইয়ে বাঙালিরা আবারো প্রমাণ করল, তাদের রক্তে বিদ্রোহের আঙ্গিক বয়ে চলছে। স্বৈরাচারী সরকারের ক্ষমতার গদি ভেঙে পড়ল, শুরু হলো নতুন করে লেখার ইতিহাস। রাজপথে উঠল লাল সবুজের পতাকা—স্বাধীনতার নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হলো।

Post a Comment

Previous Post Next Post