বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত দীর্ঘদিন ধরে নানা সমস্যার সম্মুখীন, যার সমাধান অত্যন্ত জরুরি। সম্প্রতি গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নানা ক্ষেত্রের মৌলিক সংস্কারের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, এর মধ্যে স্বাস্থ্যখাত অন্যতম। এখানে স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নের জন্য ৮টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হলো, যা দ্রুত বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
১. মেডিকেল কলেজের কার্যক্রমের অডিট
বাংলাদেশে ১১১টি মেডিকেল কলেজ (সরকারি, বেসরকারি, ও আর্মড ফোর্সেস) রয়েছে, যার মধ্যে অনেকগুলো মানহীন। একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করে অপ্রয়োজনীয় মেডিকেল কলেজগুলো বন্ধ করতে হবে। এই প্রক্রিয়াটি স্বল্প সময়ে সম্পন্ন করা গেলে সরকার আর্থিকভাবে লাভবান হবে এবং মানহীন চিকিৎসক তৈরির ঝুঁকি কমে আসবে।
২. ইন্টার্নশিপের সময়সীমা বৃদ্ধি
ইন্টার্ন চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ ১ বছরের পরিবর্তে ২ বছরে উন্নীত করার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। প্রথম বছর মেডিকেল কলেজে এবং দ্বিতীয় বছর উপজেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এতে উপজেলা হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন সম্ভব হবে এবং ঢাকার হাসপাতালের ওপর রোগীর চাপ কমবে।
৩. চিকিৎসকদের পদোন্নতি
স্বাস্থ্যখাতের বিভিন্ন বিভাগে পদোন্নতির অভাবে চিকিৎসকরা দিনানিপাত করছেন। দ্রুত পদোন্নতি ও পদায়নের ব্যবস্থা করতে হবে, যা উপজেলা ও মেডিকেল কলেজের স্বাস্থ্যসেবায় বড় পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে। এফসিপিএস ও এমডি ডিগ্রিধারী চিকিৎসকদের পদোন্নতি নিশ্চিত করতে বিশেষ উদ্যোগ প্রয়োজন।
৪. হাসপাতাল সরঞ্জামের অডিট ও নিয়োগ
উপজেলা ও জেলা হাসপাতালগুলোতে যন্ত্রপাতির অডিট করা উচিত। অধিকাংশ যন্ত্রপাতি বাক্সবন্দী অবস্থায় পড়ে আছে। এ ছাড়া, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এবং ল্যাব টেকনিশিয়ান নিয়োগ দিয়ে যন্ত্রপাতির কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
৫. আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি রক্ষা
বাংলাদেশের এমবিবিএস ডিগ্রির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হারানোর ঝুঁকি রয়েছে। এর মোকাবিলায় সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে কমিটি পুনর্গঠন করতে হবে এবং কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
৬. বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মূল্য নির্ধারণ
বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের খরচ নিয়ে বিশাল অসামঞ্জস্য রয়েছে। সার্জারি ফি, ডায়াগনস্টিক টেস্টসহ বিভিন্ন খাতের মূল্য নির্ধারণের জন্য আইন প্রণয়ন ও সংস্কারের প্রস্তাব করা হয়েছে।
৭. গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্গঠন
বিএমডিসি, বিএমআরসি, বিএনএমসির মতো প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিক নেতৃত্বের অভাবে অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে দক্ষ ব্যক্তিদের আনা এবং নতুনভাবে গঠন প্রয়োজন।
৮. স্বাস্থ্য কর্মীদের সুরক্ষা আইন
স্বাস্থ্য কর্মীদের নিরাপত্তার জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি পাবে এবং স্বাস্থ্যসেবা উন্নত হবে।
এছাড়া, দীর্ঘমেয়াদে আরও সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে, যা ভবিষ্যতে পৃথকভাবে আলোচিত হতে পারে।