চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক: উত্তেজনার নতুন অধ্যায় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রেক্ষাপট

  


চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক গত কয়েক বছর ধরে উত্তেজনার চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। দক্ষিণ চীন সাগর ও তাইওয়ানের পরিস্থিতি এখন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবের সঙ্গে জড়িত। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন থেকেই শুরু হওয়া বাণিজ্যযুদ্ধের ফল এখনও বহন করছে দুই দেশ, যার প্রভাব এখন রাজনৈতিক ক্ষমতা ও প্রভাব বিস্তারে পড়েছে।

 ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব


২০২২ সালে শুরু হওয়া ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে, এবং পশ্চিমা জোট ইউক্রেনকে ব্যাপক আর্থিক ও রাজনৈতিক সহায়তা প্রদান করলেও রাশিয়া উল্লেখযোগ্যভাবে ভূখণ্ড দখল করতে সক্ষম হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা এরই মধ্যে পাঁচ হাজার কোটি ডলারের বেশি। যখন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেন ও গাজায় সহায়তা প্রদান করছে, তখন চীন তার অর্থনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে অবস্থান মজবুত করছে।


 চীনের কৌশল ও আন্তর্জাতিক মঞ্চ


চীন বর্তমানে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব বিস্তারে সচেষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে রয়েছে। ব্রিকস এবং বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের মাধ্যমে চীন আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রভাবশালী হয়ে উঠছে। বর্তমানে ব্রিকস দেশের গড় বৈশ্বিক জিডিপির ৩৬ শতাংশ এবং জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশ তাদের অধীনে।


 যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া ও কৌশল


চীনকে মোকাবেলা করতে যুক্তরাষ্ট্র নতুন নীতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের মাধ্যমে অংশীদার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিন্যাস করছে। তবে চীনের আক্রমণাত্মক কর্মকাণ্ড, যেমন গোয়েন্দা বেলুন পাঠানো, সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলছে। মার্কিন প্রশাসন সামরিক শক্তি ব্যবহার করে চীনকে মোকাবেলার দিকে ঝুঁকছে, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের মাধ্যমে।


 সামরিক ও অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা


যুক্তরাষ্ট্র নতুন জাহাজবিধ্বংসী অস্ত্র উৎপাদনে ব্যস্ত, যা সামরিক প্রতিযোগিতায় চীনের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করবে। দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের সামরিক অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবশ্যই সহযোগী দেশগুলোর প্রয়োজন।


 রাজনৈতিক কর্তৃত্ব ও শান্তি প্রতিষ্ঠার চ্যালেঞ্জ


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে কেবল সামরিক শক্তির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে, যা রাজনৈতিক কর্তৃত্বকে অক্ষুণ্ন রাখতে সহায়তা করতে পারে। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব সংকট সৃষ্টি করছে। মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি এবং ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠছে।


উপসংহার


চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের বর্তমান পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন সংকট সৃষ্টি করেছে। রাজনৈতিক সমাধানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকেই সামনে এগিয়ে আসতে হবে, অন্যথায় বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিপন্ন হবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post