বর্তমানে বাংলাদেশে নিত্যপণ্যের দামবৃদ্ধি সীমিত আয়ের মানুষের জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন অজুহাত দাঁড় করাচ্ছেন, যার ফলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো চরম সংকটে পড়েছে। সরকার নির্ধারিত দামের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও বাজারে সেই দাম কার্যকর হচ্ছে না।
বাজার পরিস্থিতি ও পণ্যের দাম
সাম্প্রতিক সময়ে মুরগির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারের নির্দেশনায় প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ১৮০ টাকা এবং সোনালি মুরগির দাম ২৭০ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম ১৮৫-১৯০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে এবং সোনালি মুরগির দাম ২৭০-২৮০ টাকায় উঠেছে। এছাড়া, ডিমের দামও গত সপ্তাহের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে—ডজন বাদামি ও সাদা ডিম ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে সবজি ও চালের দামের ক্ষেত্রে। এক সপ্তাহ আগে কাঁচা মরিচের দাম ছিল ২০০-২২০ টাকা, এবং বেগুনের দাম ৮০-১১০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। চালের দামও কেজিতে ৪-৬ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা এখনো কমেনি। মাছের বাজারেও রুই, চিংড়ি ও পাঙাশের দাম কেজিতে ৩০-৫০ টাকা বেড়েছে।
উৎপাদন ও সরবরাহ সমস্যা
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের উপপরিচালক রেজা আহমেদ খান বলেন, "বাজারে সরবরাহ ও চাহিদার তারতম্যে কিছু পার্থক্য হতে পারে।" কিন্তু উৎপাদন খরচ বাড়লে তা তো খামারিরা আগেই হিসাব করে দামে নির্ধারণ করেছিলেন। অতএব, উৎপাদন খরচ কমানোর উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। যদি সরবরাহ কমে যায়, তার কারণ তদন্ত করা জরুরি।
আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব
বিশ্বব্যাপী দুগ্ধজাত পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার খবরও চিন্তার কারণ। নিউজিল্যান্ডের বহুজাতিক ডেইরি প্রতিষ্ঠান ফন্টেরার দ্বারা চালিত দুধের মূল্যে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। চলতি সপ্তাহে গুঁড়া দুধের দাম ১.৫ শতাংশ বেড়ে টনপ্রতি ৩,৪৪৮ ডলারে পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিক বাজারের এই ওঠানামা স্থানীয় বাজারে সরাসরি প্রভাব ফেলে, এবং এই ধরনের পরিস্থিতিতে দেশীয় উৎপাদন খরচও বৃদ্ধি পায়।
সরকারের ভূমিকা ও ব্যবস্থা
সীমিত আয়ের মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই বাজারের অস্বস্তিকর পরিস্থিতির শিকার। সরকার যদি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করে, তাহলে তারা আরও সংকটে পড়বে।
অতএব, সরকারের উচিত:
1. নিত্যপণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি: স্থানীয় উৎপাদকদের উৎসাহিত করা এবং আমদানির মাধ্যমে বাজারে পণ্যের অভাব দূর করা।
2. বাজার তদারকি: নিয়মিত বাজার তদারকি করা, যাতে ব্যবসায়ীরা কারসাজি করতে না পারে।
3. অর্থনৈতিক পরিকল্পনা: উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা।
4. ভোক্তা সচেতনতা: ভোক্তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য কার্যকর প্রচার অভিযান চালানো।
যদি সরকার এ সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তাহলে সীমিত আয়ের মানুষের জন্য কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব। ফলে, বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে।