“সরকারি চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধির যুক্তি: কি প্রভাব ফেলবে দেশের অর্থনীতিতে?

 

 সরকারি চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধির পেছনের যুক্তি ও প্রতিবন্ধকতা


 বর্তমান পরিস্থিতি

বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বর্তমানে ৩০ বছর এবং অবসরের বয়স ৫৯ বছর। মুক্তিযোদ্ধা কোটাধারীদের জন্য কিছু বিশেষ বিধি রয়েছে, কিন্তু সাধারণ চাকরিপ্রত্যাশীদের জন্য এটি একটি সমস্যা। সম্প্রতি ‘অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন’ সরকারকে আবেদন জানিয়েছে, যাতে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর এবং অবসরের বয়স ৬৫ বছর করা হয়।


 যুক্তি

1. **গড় আয়ু বৃদ্ধি**: বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭২.৩ বছর। এই পরিসংখ্যান দেখায় যে, আজকের চাকরিজীবীদের অধিকাংশের কর্মজীবন দীর্ঘ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

   

2. **অর্থনৈতিক নিরাপত্তা**: অনেকে মনে করেন যে, অবসরের বয়স বৃদ্ধি করা হলে চাকরিজীবীরা তাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বজায় রাখতে পারবেন। 


3. **বৈষম্যহীনতা**: কিছু পেশার ক্ষেত্রে যেমন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের জন্য বয়সসীমা বেশি। এই বৈষম্য দূর করার দাবি উঠছে।


 প্রতিবন্ধকতা

1. **সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি**: বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি বয়সসীমা বৃদ্ধি করা হয়, তবে সরকারের বেতন ও পেনশন খাতে ব্যয় বাড়বে। 


2. **নতুন চাকরির সুযোগ**: বয়সসীমা বৃদ্ধির ফলে নতুন চাকরিপ্রত্যাশীরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে, যা তাদের চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে দেবে।


3. **জটিলতা সৃষ্টি**: দীর্ঘমেয়াদে প্রশাসনিক কার্যক্রমে জটিলতা দেখা দিতে পারে, যা সরকারের কার্যক্ষমতা হ্রাস করতে পারে।

বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের এবং অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধির দাবি নতুন নয়, তবে সম্প্রতি এই বিষয়ে আবারও আলোচনা শুরু হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে চাকরিপ্রত্যাশীরা এ দাবিতে আন্দোলন করেছেন, এবং এবার প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন ‘অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন’ ৫ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আবেদন করেছে, যাতে চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ বছর এবং অবসরের বয়স ৬৫ বছর করা হয়।


জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মপরিধির আওতায় পড়ে বলে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর ওই চিঠি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, এই চিঠির প্রেক্ষিতে উভয় দিক থেকে বয়সসীমা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।


তবে, প্রশ্ন উঠছে—যদি এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হয়, তাহলে কি এটি রাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের সাথে মিলে আরও বোঝা সৃষ্টি করবে?


বর্তমানে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩০ বছর এবং অবসরের বয়সসীমা ৫৯ বছর। মুক্তিযোদ্ধা কোটাধারীদের ক্ষেত্রে এটি ৩২ এবং ৬০ বছর। তবে অন্যান্য পেশায় যেমন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবসরের বয়সসীমা ৬৫ বছর এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের ৬৭ বছর।


বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২৩ সালের জরিপ অনুযায়ী, দেশের গড় আয়ু ৭২.৩ বছর, যা গত দুই দশকের তুলনায় বেশি। এই কারণে, আন্দোলনকারীরা মনে করেন যে, জীবনকালের সাথে সামঞ্জস্য রেখে চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি করা উচিত। অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আনোয়ার উল্লাহ জানিয়েছেন, "অবসরের বয়স না বাড়ালে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা সমস্যায় পড়বে।"


অন্যদিকে, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বয়সসীমা বৃদ্ধির ফলে সরকারি খরচ বাড়বে এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। এদিকে, যাদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা শেষের দিকে, তারা নতুন চাকরিপ্রত্যাশীদের জন্য কঠিন প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করবে।


বাংলাদেশে বর্তমানে বেকারের সংখ্যা ২৫ লাখ ৯০ হাজার। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, বয়সসীমা বৃদ্ধির ফলে তরুণরা সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিতে দেরি করবে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।


আবু আলম শহীদ খান বলছেন, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির যৌক্তিকতা প্রশ্নবিদ্ধ। তিনি উল্লেখ করেন, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীরা নিয়মিত পড়াশোনা করে ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত পরীক্ষার সুযোগ পান। 


এখন পর্যন্ত, বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ছিল ২৭ বছর, যা ১৯৯১ সালে ৩০ বছর করা হয়। অবসরের বয়স ৫৭ বছর থেকে ২০১১ সালে ৫৯ বছরে উন্নীত হয়।


সম্প্রতি, চাকরিপ্রত্যাশীরা আবার আন্দোলনে নেমেছেন। তবে, সরকার তাদের বয়সসীমা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে সিদ্ধান্ত নিলে, নতুন পদ সৃষ্টি করা বা বেকারত্বের সমস্যা মোকাবেলা করা হবে কি না, সেটি এখনও অস্পষ্ট। আনোয়ার উল্লাহ জানিয়েছেন, “যদি ৩৩ বছর বয়সে কেউ চাকরিতে যোগ দেয়, তাহলে তার জন্যও একটি এক্সিট রাখতে হবে।” এই সমস্ত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে এবং সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে দেশের চাকরিপ্রত্যাশীরা।

Post a Comment

Previous Post Next Post