নির্ধারিত সময়ে আয়কর রিটার্ন জমা না দিলে যেসব সমস্যায় পড়তে পারেন

 


আয়কর রিটার্ন জমা না দিলে করদাতাদের নানা ধরনের সমস্যা ও জরিমানার সম্মুখীন হতে হয়। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট অনুযায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এক মাস সময় বৃদ্ধির অনুমোদন পেলেও অনেক করদাতা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন জমা দিতে ব্যর্থ হন। এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু তথ্য নিচে দেওয়া হলো:


১. নির্ধারিত সময়সীমা


ব্যক্তি পর্যায়ের করদাতা: রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় ১ জুলাই থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত।


কোম্পানি: ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় থাকে।



২. সময় বৃদ্ধির সুযোগ


নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন জমা দিতে না পারলে করদাতা সর্বোচ্চ চার মাস সময় বৃদ্ধির আবেদন করতে পারেন:


প্রথম দুই মাসের জন্য সংশ্লিষ্ট সার্কেলের উপ-কর কমিশনার অনুমোদন দিতে পারেন।


অতিরিক্ত দুই মাস সময় বাড়ানোর জন্য যুগ্ম কর কমিশনারের অনুমোদন নিতে হবে।



৩. রিটার্ন দাখিল করতে ব্যর্থ হলে জরিমানা


যৌক্তিক কারণ ছাড়া যদি কোনো করদাতা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন জমা না করেন, তবে:


জরিমানা: উপ-কর কমিশনার সর্বশেষ নিরূপিত আয়ের ১০ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা আরোপ করতে পারেন, যার ন্যূনতম পরিমাণ ১,০০০ টাকা।


অতিরিক্ত জরিমানা: নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন জমা না করলে প্রতিদিন ৫০ টাকা করে অতিরিক্ত জরিমানা দিতে হবে।



৪. অনিয়মের জন্য শাস্তি


রিটার্ন জমা করার পরও যদি কোনো অনিয়ম ধরা পড়ে, তবে:


ভুল টিআইএন নম্বর ব্যবহার: ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা।


আয়ের তথ্য গোপন: বিভিন্ন হারে জরিমানা হতে পারে।



৫. আপিলের সুযোগ


যদি কোনো করদাতা আয়কর কর্তৃপক্ষের আদেশে অসন্তুষ্ট হন, তাহলে তিনি আপিল করতে পারবেন:


ফরম ও পদ্ধতি: নির্ধারিত ফরম ও পদ্ধতি মেনে আপিল করা যাবে।


শুনানি: আপিল কর্তৃপক্ষ শুনানির জন্য তারিখ ও স্থান নির্ধারণ করবেন।



৬. সময়মতো রিটার্ন জমা না দিলে যেসব সুবিধা হারাবেন


৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন জমা না করলে করদাতারা কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হারাতে পারেন:


1. কর অব্যাহতির সুবিধা হারানো: কর অব্যাহতির আওতায় থাকা আয় করযোগ্য হিসেবে গণ্য হবে।



2. কর মুক্ত আয়ের সুবিধা পাবে না।



3. হ্রাসকৃত হারে কর প্রদানের সুবিধা পাবে না।



4. বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত সুবিধা পাবে না।



5. অতিরিক্ত কর: আয়কর আইন, ২০২৩ এর ধারা ১৭৪ অনুযায়ী অতিরিক্ত কর দিতে হবে।



6. জরিমানা: আয়কর আইন, ২০২৩ এর ধারা ২৬৬ অনুযায়ী নির্ধারিত হারে জরিমানা দিতে হবে।




৭. অন্যান্য সমস্যা


আয়কর রিটার্ন জমা না দিলে আরও কিছু সমস্যা হতে পারে:


ট্রেড লাইসেন্স: নির্ধারিত সময়ে রিটার্ন না জমা দিলে ট্রেড লাইসেন্স করতে সমস্যা হবে।


ভিসা আবেদন: রিটার্ন জমা না দিলে ভিসার আবেদন প্রক্রিয়ায় জটিলতা দেখা দিতে পারে।


জরিমানা: দেরি হলে এক হাজার টাকা বা আগের বছরের ট্যাক্সের ১০% জরিমানা দিতে হবে, যা বেশি হবে সেটাই প্রযোজ্য হবে।


বেশি জরিমানা: কয়েক বছর ধরে রিটার্ন জমা না করলে প্রতিদিন ৫০ টাকা করে জরিমানা হবে।


বাড়তি কর: পুরোনো করদাতাদের ক্ষেত্রে গত বছরের করের ৫০% পর্যন্ত বাড়তি দিতে হতে পারে।


জরিমানা ও সুদ: করযোগ্য হলেও কর না দিলে ২৫% বাড়তি জরিমানা, প্রতি মাসে ২% সরল সুদ এবং বকেয়া করের সমপরিমাণ জরিমানা আরোপিত হতে পারে।



এই তথ্যগুলো আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া এবং জরিমানা ও সুবিধা সংক্রান্ত যাবতীয় নিয়মকানুন সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করবে।


Post a Comment

Previous Post Next Post