বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে আনার জন্য সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করা আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে করা রিভিউ আবেদন পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করেছেন আপিল বিভাগ। ফলে, বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা পুনরায় সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের হাতে ফিরে এসেছে। আইনজীবীরা জানান, এই রায়ের মাধ্যমে দেশের উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণ নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্কের অবসান ঘটলো।
রোববার (২০ অক্টোবর) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এই রায় দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, এবং রিটকারীদের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীতে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। একই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর সংশোধনীর গেজেট প্রকাশ করা হয়। এর কিছুদিন পর, ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয়জন আইনজীবী এই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। ২০১৬ সালের ৫ মে, হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক, এবং বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত একটি বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনীকে বাতিল ঘোষণা করে।
হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে এবং ২০১৭ সালের ৩ জুলাই আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির বেঞ্চ সর্বসম্মতিতে রায় দেন। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ১ আগস্ট ৭৯৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।
রাষ্ট্রপক্ষ এই রায়ের পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর আবেদন করে। তবে, বারবার কার্যতালিকায় আসলেও রিভিউয়ের শুনানি এতদিন হয়নি। অবশেষে ২০ অক্টোবর, ২০২৪ সালে আপিল বিভাগ রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি করে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের হাতে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা পুনর্বহাল করেন।
এই রায়ের মাধ্যমে ১৯৭২ সালের সংবিধানে বিচারপতিদের অপসারণের যে ক্ষমতা সংসদের হাতে ছিল, সেটি আবারো সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের হাতে ফিরে গেল।