![]() |
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আয়কর অব্যাহতি পেয়ে আসছিল গ্রামীণ ব্যাংক |
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংককে ২০২৯ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতি দিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, ব্যাংকের অর্জিত সব ধরনের আয় আগামী পাঁচ বছরের জন্য আয়কর প্রদান থেকে অব্যাহতি পাবে। এনবিআরের এই সিদ্ধান্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে, যেখানে এটি নিয়ে ইতিবাচক ও নেতিবাচক মন্তব্য উঠে আসছে।
প্রশ্ন উঠেছে, গ্রামীণ ব্যাংক কি প্রথমবারের মতো কর অব্যাহতির সুবিধা পেয়েছে?
সাবেক ও বর্তমান এনবিআর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নিয়মিত কর অব্যাহতির সুবিধা পেয়ে আসছিল। তবে ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এই সুবিধা বন্ধ করে দেয় পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকার, যা নিয়ে অধ্যাপক ইউনূস ও সরকারের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েনও ছিল। এর আগেও এনবিআর নিয়মিতভাবে প্রজ্ঞাপন জারি করে এই সুবিধার মেয়াদ নবায়ন করে আসছিল।
এনবিআরের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান জানান, ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে কাজ করা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো গ্রামীণ ব্যাংকও একই ধরনের সুবিধা পেতে পারে। ব্যাংকটির কর অব্যাহতির বিষয়টি বাদ পড়েছিল, যা পুনর্বহাল করে ২০২৯ সালের জুন পর্যন্ত কর অব্যাহতির মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে। একই দিনে একটি পৃথক প্রজ্ঞাপনে অলাভজনক দাতব্য সংস্থা আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনকেও কর অব্যাহতি দেওয়া হয়।
কেন এই কর অব্যাহতি দেওয়া হলো?
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, "আয়কর আইন ২০২৩ এর ধারা ৭৬ এর উপধারা (১) এর ক্ষমতাবলে গ্রামীণ ব্যাংক আইন ২০১৩-এর অধীনে গ্রামীণ ব্যাংকের আয়কে আয়কর থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো।" অর্থাৎ আইন অনুযায়ী, ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে কর অব্যাহতি দেওয়া হয়, যা গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
অর্থনীতিবিদ ও সাবেক রাজস্ব কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার দারিদ্র্য বিমোচন ও নারী ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে গ্রামীণ ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিভিন্ন সময় কর ছাড় দিয়ে আসছে। বিশেষ করে গ্রামীণ ব্যাংক, যা দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে কাজ করে, তারা শুরু থেকেই করমুক্ত সুবিধা পেয়ে আসছিল।
গ্রামীণ ব্যাংকের সাথে কর অব্যাহতির সম্পর্ক:
১৯৮৩ সালে সামরিক অধ্যাদেশের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই গ্রামীণ ব্যাংক নিয়মিত কর অব্যাহতির সুবিধা ভোগ করে আসছিল। ২০১৩ সালে ব্যাংকটি আইনগতভাবে অনুমোদন পাওয়ার পরও কর অব্যাহতির ধারা বজায় ছিল। সর্বশেষ ২০১১ সালে একটি প্রজ্ঞাপনে এই সুবিধার মেয়াদ ২০২০ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। তবে ২০২১ সালে সরকারের সিদ্ধান্তে এই সুবিধা বন্ধ হয়ে যায়।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে অধ্যাপক ইউনূসের দ্বন্দ্বের কারণেই এই কর সুবিধা বন্ধ হয়েছিল। তৎকালীন অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, যদি আইনগতভাবে এই সুবিধা না থাকত, তবে সেই সময়ই এটি বাতিল করা হতো।
অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র দুই মাসের মাথায় গ্রামীণ ব্যাংক পুনরায় কর অব্যাহতি পাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। অনেকেই মনে করছেন, অধ্যাপক ইউনূসের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তি এবং তার দীর্ঘমেয়াদী ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের জন্য গ্রামীণ ব্যাংক এই সুবিধা পুনরায় পেয়েছে।
তবে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, "আমরা আইন অনুযায়ী গ্রামীণ ব্যাংককে কর অব্যাহতি দিয়েছি। ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে কাজ করা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো তারাও এই সুবিধা পাওয়ার যোগ্য।"
বিশ্লেষকদের মতে, আইনগত কিছু অস্পষ্টতা এবং বিভিন্ন সরকারের নীতিগত পরিবর্তনের কারণে কর অব্যাহতি নিয়ে বিতর্ক হতে পারে, তবে সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।