সূত্র:
- বিবিসি নিউজ বাংলা, ঢাকা
বাংলাদেশের সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের গত দেড় দশকে জনপ্রশাসনে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেছে। অনুমোদিত সংখ্যার চেয়ে প্রায় দেড় গুণ বেশি কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়ে সচিব এবং অতিরিক্ত সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই পদোন্নতি প্রশাসনের জন্য একটি চাপের সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে অতিরিক্ত সচিব এবং যুগ্ম-সচিব পদে, যেখানে নিয়োগের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
প্রশাসনিক ব্যয় বৃদ্ধি
এই পরিস্থিতির ফলে প্রশাসনিক ব্যয় দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। অতিরিক্ত কর্মকর্তাদের বেতন, ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে, যা জনগণের করের টাকার অপচয় বলে মনে হচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ও ভাতায় সরকারের ব্যয় গত এক দশকে প্রায় আড়াই গুণ বেড়ে গেছে।
কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ
এদিকে, রাজনৈতিক বিবেচনায় পদোন্নতির কারণে বাকি কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। অনেক কর্মকর্তা যোগ্যতা সত্ত্বেও পদোন্নতি পাননি, যার ফলে তারা নিজেদের বঞ্চিত মনে করছেন। বর্তমান কর্মকর্তাদের অভিযোগ, যাদেরকে আওয়ামী লীগ সরকার 'নিজেদের লোক' মনে করেছে, তাদেরকেই বেছে বেছে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
বিক্ষোভ ও অস্থিরতা
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ প্রকাশ পাচ্ছে। পদোন্নতি ও পদায়নের দাবিতে কর্মকর্তারা বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করছে। সচিবালয়ে হাতাহাতির মতো ঘটনাও ঘটছে, যা প্রশাসনের অস্থিরতার একটি লক্ষণ।
সরকারী পদক্ষেপ
অন্তর্বর্তী সরকার বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে নিয়ে প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টা করছে। অনেক চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে এবং কিছু কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। এর ফলে সচিবের সংখ্যা কিছুটা কমে এসেছে, কিন্তু সমস্যা এখনও সমাধান হয়নি।
প্রশাসনের ভারসাম্যহীনতা
বর্তমানে জনপ্রশাসনের কাঠামো 'পিরামিড' হওয়ার কথা, যেখানে উচ্চ পদে জনবল কম এবং নিম্ন পদে বেশি হওয়া উচিত। কিন্তু বাস্তবে উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। ফলে প্রশাসনে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হচ্ছে, যা কাজের গতিতে বাধা দিচ্ছে। কর্মকর্তারা একাধিক পদে কার্যকরভাবে কাজ করতে পারছেন না।
রাজনৈতিক চাপ ও নিরপেক্ষতার অভাব
বিভিন্ন সরকারই নিজেদের স্বার্থে কর্মকর্তাদের ব্যবহার করেছে, যার ফলে প্রশাসন রাজনৈতিকভাবে দলীয় হয়ে পড়েছে। কর্মকর্তারা অনেক সময় নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। রাজনৈতিক সরকারগুলো তাদের স্বার্থে কর্মকর্তাদের বেতন বৃদ্ধি করেছে, যার মাধ্যমে তারা প্রশাসনকে নিজেদের পক্ষে টেনে আনতে চেষ্টা করেছে।
সমাধানের জন্য পদক্ষেপ
বর্তমান সরকার প্রশাসনে অস্থিরতা ও কাজের ধীরগতির সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য কাজ করছে। 'সরকারি চাকরি আইন ২০১৮' এর মাধ্যমে সরকারি চাকরিজীবীদের সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। সরকার এখন একটি কমিশন গঠন করেছে, যার মাধ্যমে প্রশাসনের কাঠামো ও কার্যক্রমে পরিবর্তন আনার চেষ্টা চলছে।
ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ
তবে, সরকার যদি দ্রুততার সঙ্গে প্রশাসনের এই অস্থিরতা সমাধান করতে না পারে, তবে তারা ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। প্রশাসনে কার্যকরী পরিবর্তন না ঘটালে নতুন সরকারের ভাবমূর্তির সংকট হতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে জনগণের মধ্যে আস্থা হারানোর কারণ হতে পারে।
সার্বিকভাবে, অতিরিক্ত কর্মকর্তা, রাজনৈতিক বিবেচনা, এবং প্রশাসনের ভারসাম্যহীনতা অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য একটি কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, যা কার্যকরীভাবে মোকাবেলা করা জরুরি।