দ্য ডেইলি স্টার বাংলার এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে গত ১৫ বছরে ঘটে যাওয়া শেয়ার কারসাজি, দুর্বল নিয়ন্ত্রণ এবং বিনিয়োগকারীদের বিপদ নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের অধীনে পুঁজিবাজারে শেয়ারের মূল্য নিয়ে ব্যাপক কারসাজি হয়েছে এবং এটি একটি নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
পুঁজিবাজারে কারসাজির ধরন:
শেয়ারের সিরিয়াল ট্রেডিং: বিনিয়োগকারীদের প্রতারণা করে শেয়ারের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়ানো হয়, যা বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ব্যাংকসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান জড়িত: ব্যাংক ও অন্যান্য বড় প্রতিষ্ঠানও শেয়ারের দাম কারসাজির সাথে জড়িয়ে পড়েছে, যা আগে দেখা যায়নি।
বিএসইসির দুর্বল নজরদারি: বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) শেয়ারের কারসাজির বিরুদ্ধে কার্যকর শাস্তি প্রদান করতে ব্যর্থ হয়েছে। ঢিলেঢালা নিয়ন্ত্রণের ফলে কারসাজিকারীরা বাজার থেকে বিপুল মুনাফা করতে পেরেছে।
বিনিয়োগকারীদের দুর্ভোগ:
কষ্টার্জিত অর্থ হারানো: নিয়ন্ত্রণের অভাবে বহু বিনিয়োগকারী তাদের টাকা হারিয়েছে এবং পুঁজিবাজার থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়েছে।
ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের প্রতারণা: প্রায় ৭০টি ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগকারীদের টাকার একটি অংশ আত্মসাৎ করেছে, যার ফলে বিনিয়োগকারীরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমনকি মিউচুয়াল ফান্ডেও বিনিয়োগকারীদের টাকা অপব্যবহার করা হয়েছে।
শেয়ারবাজারে আস্থার সংকট: বাজারে শেয়ারের কারসাজির কারণে বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে আস্থা হারিয়েছেন। পেশাদার তহবিল পরিচালকরাও পর্যাপ্ত মুনাফা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
বিএসইসির ভূমিকা:
অবহেলা ও দুর্বল শাস্তি: বিএসইসি কারসাজির বিরুদ্ধে সামান্য জরিমানা করেছে, যা শেয়ার কারসাজিকারীদের বড় মুনাফার সামনে তুচ্ছ মনে হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২২ সালে ২৫৩ কোটি টাকার শেয়ার কারসাজির বিপরীতে বিএসইসি মাত্র ২১ কোটি টাকা জরিমানা করেছিল।
দুর্বল প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্তি: দুর্বল ও অযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যা বাজারের স্থিতিশীলতাকে নষ্ট করেছে এবং শেয়ারের মূল্য আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা:
বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিএসইসির কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রণয়ন এবং শক্তিশালী শাস্তি ব্যবস্থা প্রয়োগ না করা হলে শেয়ারের কারসাজি চলতেই থাকবে। এছাড়া কারসাজিকারীরা প্রভাবশালী হয়ে বিএসইসিকে প্রভাবিত করতে এবং নিজেদের মুনাফা বাড়াতে সক্ষম হয়েছে।
পরিষ্কার বক্তব্য: বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে কারসাজির কারণে পেশাদারিত্ব, প্রতিযোগিতা, এবং বাজারের পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে আস্থা হারিয়েছেন এবং বিনিয়োগ করা অর্থ নিরাপদ মনে করছেন না।