নতুন সরকার গঠনের তিন মাস পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি দেখা যাচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এই সরকারের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও, বিশেষ করে সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে নতুন সদস্য যুক্ত হওয়ার ঘটনায় এই সংঘাত প্রকাশ্যে আসে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা ফেসবুকে প্রোফাইল ছবি লাল করে এবং বিভিন্ন বিক্ষোভের মাধ্যমে প্রতিবাদ করছেন। তাদের অভিযোগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাদের অনেকেরই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রতি আনুগত্য রয়েছে।
আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ জানিয়েছেন, "সরকারের কিছু সিদ্ধান্ত জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাচ্ছে না। এর কারণেই আমরা এই প্রতিবাদ করছি।" তিনি আরো বলেন, "গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে সম্পর্কহীন এবং ক্ষমতাসীন দলের অনুগতদের উপদেষ্টা করা নিয়ে আমাদের স্পষ্ট সন্দেহ আছে।"
অন্যদিকে, সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের ছাত্র প্রতিনিধি আসিফ মাহমুদ বিরোধের বিষয়টি স্বীকার করে জানান, "আমরা বিষয়টি নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করছি এবং ছাত্র আন্দোলনের কর্মীদের বোঝানোর চেষ্টা করছি।" তবে তিনি ক্ষমতাকেন্দ্রিক কোনো দ্বন্দ্বের সম্ভাবনা নাকচ করেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অনেক দাবি এখনও পূরণ হয়নি, যা আন্দোলনের নেতৃত্বের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ এবং সংবিধান বাতিলের দাবিগুলো বাস্তবায়িত হয়নি। এসব দাবি পূরণ না হওয়ায় আন্দোলনের নেতাকর্মীরা সরকারের প্রতি হতাশা প্রকাশ করছেন।
উপদেষ্টা নিয়োগ প্রসঙ্গে বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, "নতুন উপদেষ্টাদের নিয়োগে স্বচ্ছতা নেই, এবং তাদের রাজনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, যা সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ন করছে।"
এই বিরোধ মিটিয়ে ফেলার জন্য সরকার আলোচনায় বসতে ইচ্ছুক বলে জানিয়েছে। সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ জানান, "আমরা সকলের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিরোধের সমাধান করতে চাই, যাতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা আমাদের পাশে থাকে।"
তবে, আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, "সরকারের ভুল-ত্রুটির সমালোচনা করতে আমরা পিছপা হবো না। প্রয়োজন হলে গণমাধ্যমের মাধ্যমেও আমাদের কথা প্রকাশ করব।"