
অন্তর্বর্তী সরকারের গত তিন মাসে একাধিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। মূলত রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনের দাবির চাপ, নতুন উপদেষ্টাদের নিয়োগ নিয়ে সমালোচনা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের ওপর চাপ ক্রমেই বাড়ছে।
### রাজনৈতিক চাপ:
বিএনপিসহ বিভিন্ন সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো দ্রুত জাতীয় নির্বাচন চাচ্ছে। তাদের মতে, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সংস্কার সম্ভব নয়। এ নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় মিছিল, সমাবেশ এবং সভা চলছে। ভারতের গণমাধ্যমে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে নানা রকমের সমালোচনা প্রকাশিত হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিকভাবে চাপ তৈরি করছে।
### উপদেষ্টাদের নিয়োগ নিয়ে সমালোচনা:
নতুন উপদেষ্টাদের মধ্যে কয়েকজনকে নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। তাদের রাজনৈতিক সংযোগ এবং আওয়ামী লীগের কাছ থেকে সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নতুন ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তরের দাবিতে সচিবালয় ঘেরাও করে। এর ফলে সেখানে উত্তেজনা তৈরি হয়। এছাড়া নতুন নিযুক্ত দুই উপদেষ্টার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচুর সমালোচনা হচ্ছে এবং তাদের সরানোর দাবিতেও বিক্ষোভ হয়েছে।
### অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ:
বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে অক্টোবরে ১২.৬৬ শতাংশ হয়েছে, যা সেপ্টেম্বরের তুলনায় অনেক বেশি। জনগণের মাঝে এই মূল্যস্ফীতির কারণে চরম ভোগান্তি দেখা দিচ্ছে, যা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
### শিক্ষার্থীদের আন্দোলন:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নতুন উপদেষ্টা নিয়োগ নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, উপদেষ্টাদের নিয়োগে কোনো যোগ্যতার বিচার হয়নি এবং এটি ছাত্রদের সঙ্গে প্রতারণা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে তাদের দাবি আদায়ের জন্য বিক্ষোভ করেছে।
### সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতিক্রিয়া:
নতুন উপদেষ্টাদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা বেড়েছে। অনেকেই এই সরকারকে এনজিওগ্রাম সরকার বলে আখ্যায়িত করছেন, কারণ উপদেষ্টাদের অধিকাংশই এনজিও ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছেন। এনজিওগ্রাম সরকার দিয়ে দেশ পরিচালনার বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
### সমাধানের পথ:
বিশ্লেষকদের মতে, সরকারের উচিত দ্রুত একটি নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা করা, যাতে জনগণের আস্থা অর্জন করা যায়। এছাড়া, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রশাসনকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের বৈধ দাবি মেনে নিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা যায়।
এভাবে, একাধিক বিষয়ে চাপ এবং সমালোচনার সম্মুখীন হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার, যা সামনের দিনগুলোতে আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।