স্বস্তি সংস্কার উদ্যোগে অস্বস্তি বাজারে, মূল্যস্ফীতিই বড় চ্যালেঞ্জ

 যুগান্তর 

মিজান চৌধুরী

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ


ব্যাংক খাতের সংস্কার এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক পদক্ষেপের কারণে সামগ্রিকভাবে কিছুটা স্থিতিশীলতা এসেছে, তবে এখনও বড় চ্যালেঞ্জগুলো রয়ে গেছে। রিজার্ভের পতন ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বিক্রি বন্ধ করেছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় এলসি খোলার শর্ত শিথিল করা হয়েছে। যদিও ব্যবসায়ীদের নির্বিঘ্নে এলসি খোলার পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি।


মূল্যস্ফীতি, বিশেষত খাদ্য মূল্যস্ফীতি, সাধারণ মানুষের জীবনে বড় প্রভাব ফেলেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ১০.৪০ শতাংশে দাঁড়ালেও এটি এখনও সহনীয় পর্যায়ে নেই। সার্বিক মূল্যস্ফীতি ১০.৪৯ শতাংশে স্থিতিশীল হলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষকে চাপে ফেলেছে।


অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে, তবে বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। বিনিয়োগের নতুন পরিবেশ তৈরি না হওয়ায় নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে না। গত তিন বছরে অর্থনীতির টানাপোড়েনের ফলে তৈরি পোশাক খাতসহ অন্যান্য উৎপাদন খাতে সৃষ্ট সংকট কাটেনি। উৎপাদন খাতের অস্থিতিশীলতার কারণে শিল্প এলাকায় প্রায় প্রতিদিন বিক্ষোভ ও সংঘাত হচ্ছে।

ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ এবং অর্থ পাচারের মতো গুরুতর সমস্যাগুলোও সমাধানের পথে নেই। জুন শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকায়, যা দেশের ব্যাংকগুলোকে বিপদে ফেলেছে। অর্থ পাচার রোধ এবং বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে, কিন্তু এখনো উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি।


এছাড়াও, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে রাজস্ব আদায় কম হয়েছে, যা অর্থনৈতিক চাপ আরও বাড়াচ্ছে। তবে সরকারের রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সের প্রবাহ কিছুটা বেড়েছে, যা কিছুটা আশার সঞ্চার করেছে। সরকার রিজার্ভ পরিস্থিতি উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে, যেমন রাশিয়া ও চীনের ঋণের সুদহার কমানো এবং ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বাড়ানোর অনুরোধ।


অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় গঠিত বিভিন্ন টাস্কফোর্স সংস্কারের সুপারিশ করতে কাজ করছে, তবে বাস্তবায়নের জন্য সময় প্রয়োজন হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সময়মতো সংস্কার কার্যক্রম না হলে অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ আরও বাড়তে পারে।


Post a Comment

Previous Post Next Post