রাষ্ট্রপুঞ্জে ইউনূসের কূটনৈতিক সাফল্য: নয়াদিল্লির উদ্বেগ বৃদ্ধি পাচ্ছে

 

মুহাম্মদ ইউনূস। —ফাইল চিত্র।

সূত্র : আনন্দবাজার অনলাইন রিপোর্ট ;০২ অক্টোবর ২০২৪

মুহাম্মদ ইউনূস রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সম্মেলনে তার বক্তৃতার পাশাপাশি বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে একাধিক কূটনৈতিক বৈঠক সম্পন্ন করে একটি শক্তিশালী আন্তর্জাতিক বার্তা দিয়েছেন। তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন, বিদেশসচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই সঙ্গে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট, বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে তার। এই সব বৈঠকের মূল প্রতিপাদ্য ছিল বাংলাদেশের ক্ষমতায় পরিবর্তন ঘটলেও পশ্চিমা দুনিয়া, বিশেষ করে আমেরিকার সমর্থন বাংলাদেশের প্রতি অব্যাহত থাকবে।


এই সাফল্যগুলো নয়াদিল্লিতে বিশেষভাবে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ইউনূসের বৈঠক এড়িয়ে যাওয়ার মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নিপীড়ন রোধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে সাউথ ব্লকের অসন্তোষ। মোদীর সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ না হলেও, আমেরিকার পূর্ণ সমর্থন নিয়ে ইউনূস তার কূটনৈতিক অভিযান সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন, যা ভারতের জন্য একটি কৌশলগত হুমকি তৈরি করেছে।


ভারতীয় কূটনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে যে, বাংলাদেশের নতুন সরকারের মাধ্যমে ইউনূসের নেতৃত্বে একটি পরিবর্তন হতে পারে যা ভারতের প্রতি নির্ভরতা কমিয়ে আনবে। বিশেষত, বাংলাদেশের চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করার চেষ্টা এবং সার্ক পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়গুলো নয়াদিল্লির চিন্তা বাড়াচ্ছে। ইউনূসের পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ এবং চীনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-এর সঙ্গে বৈঠক বিশেষভাবে আলোচনায় এসেছে। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের প্রচেষ্টায় ইউনূসের এই উদ্যোগ ভারতীয় কূটনৈতিক মঞ্চে অস্বস্তি তৈরি করেছে।


আরও উদ্বেগজনক হলো, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিকভাবে বৈধতা পেয়ে গিয়েছে, যা আগামীতে ঢাকার কৌশলগত অবস্থানকে আরও দৃঢ় করতে পারে। ইসলামাবাদের সঙ্গে ঢাকার সম্পর্ক যদি আরো ঘনিষ্ঠ হয়, তবে ভারত এই সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণে কোনো কার্যকর কূটনৈতিক অস্ত্র হাতে রাখছে না বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞরা।


উল্লেখযোগ্যভাবে, ইউনূস তার রাষ্ট্রপুঞ্জের বক্তৃতা বাংলায় দিয়েছেন, যা বাংলাদেশের জাতীয় স্বকীয়তাকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরার চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। তিনি পশ্চিমা নেতাদের কাছে বাংলাদেশের ভবিষ্যতের কৌশল এবং সম্ভাব্য নেতৃত্বের প্রতি সমর্থন নিশ্চিত করতে সফল হয়েছেন। এর ফলে, নয়াদিল্লির জন্য অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ঢাকার সঙ্গে সম্পর্কের নতুন রূপরেখা তৈরি করার চাপ তৈরি হয়েছে।


Post a Comment

Previous Post Next Post