নীরবে সরবে চাঁদাবাজি

 ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পতনের পরও চাঁদাবাজি থামেনি। সরকারের পরিবর্তনে শুধু নেতৃত্বের মুখ বদলেছে, কিন্তু চাঁদাবাজির অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। সরকারের শুরুর দিকে কিছুটা ‘বিরতি’ ছিল, তবে পরে নতুন চাঁদাবাজদের হাতে এই কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়। জেল থেকে মুক্তি পাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসীরাও এতে জড়িত, এবং তাদের নেতৃত্বে মাঠে নেমেছে চাঁদাবাজদের দল। তারা বিভিন্ন ব্যবসা থেকে চাঁদা আদায় করছে, যেমন- ডিস ও ইন্টারনেট ব্যবসা, দরপত্র নিয়ন্ত্রণ, পরিবহন, ফুটপাত, বাজার, এবং জমি দখল। ফোনে কিংবা সরাসরি এসে তারা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছে।


চাঁদাবাজির প্রধান টার্গেট হচ্ছে শিল্পাঞ্চল, বাণিজ্যিক এলাকা, বাস, নৌ-টার্মিনাল, এবং হাটবাজার। চাঁদাবাজির মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তারা ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে প্রভাবশালী নেতাদের আশ্রয়ে থাকে। আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে এই চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণকে অত্যাচারিত করে আসছিল। বর্তমান সরকার পরিবর্তনের পরও চাঁদাবাজির এ চক্র বন্ধ হয়নি। পুরনো সিন্ডিকেটের জায়গায় নতুন চাঁদাবাজরা এসে তা দখল করে নিয়েছে।

উল্লেখযোগ্য চাঁদাবাজি এলাকা হলো রাজধানীর সায়েদাবাদ, মহাখালী, গাবতলী, এবং ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনাল। আগে এসব এলাকা ‘শাহজাহান-রাঙা’, ‘এনায়েত-সিরাজ’, এবং ‘কালাম-রুস্তম-সামদানি’ সিন্ডিকেট দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল, যারা সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। এখন তারা পলাতক, তবে চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি। নতুন মুখ এসে সেই জায়গাগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে। একইভাবে কারওয়ান বাজারের চাঁদাবাজি আগে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অধীনস্থ লোকজন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল। তবে সরকার বদলের পর সেখানে নতুন একটি দল এসে দখল নিয়েছে এবং চাঁদাবাজি চালাচ্ছে।


চাঁদাবাজি নিয়ে কারওয়ান বাজারে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে, যেখানে একাধিক ব্যক্তি আহত হন। চাঁদাবাজি প্রতিহত করার চেষ্টা করলেও ব্যবসায়ীরা এখনও সুরক্ষিত নয়, কারণ নতুন নতুন চাঁদাবাজ গোষ্ঠী সব জায়গাতেই সক্রিয়। রাজধানীর আজিমপুর এবং লালবাগ এলাকায় অন্তত ৪০ জনের চাঁদাবাজি সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে, যারা চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরাও বটে।


সরকার পরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কারাগার থেকে ছয় শীর্ষ সন্ত্রাসীকে মুক্তি দিয়েছে, যারা আগে থেকেই চাঁদাবাজিতে সক্রিয় ছিল। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর তারা আবারও মাঠে নেমেছে এবং পুরনো অপরাধের সম্রাজ্য পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে। তারা বিভিন্ন এলাকায় মহড়া দিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতে শুরু করেছে।


বিএনপি ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের কিছু নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এসব অপকর্মে জড়িতদের সতর্ক করেছেন এবং দলের পক্ষ থেকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন। তবে চাঁদাবাজির এ প্রবণতা এখনও কমেনি, বরং বিভিন্ন খাতে আরও বেড়েছে।


Post a Comment

Previous Post Next Post