(রম্য আলাপ)
আইফোন আর ইলিশ মাছের মধ্যে পার্থক্য কী জানেন? বলুন তো! বাজারে আপনি সেকেন্ড হ্যান্ড আইফোন পেতে পারেন, কিন্তু সেকেন্ড হ্যান্ড ইলিশ? ওইটা তো স্বপ্নেও ভাবা যায় না! ইলিশ মাছের দামের কথা শুনে মনে হয়, এর জন্য আলাদা কোনো ব্যাংক লোনের ব্যবস্থা থাকা উচিত। তাই কম দামে ইলিশ কেনার স্বপ্ন দেখা ঠিক নেই। তবে আশাহত হওয়ার কিছু নেই, ইলিশ মাছ কিনতে না পারলেও ইলিশের তরকারি কিন্তু রেঁধে খেতে পারেন! কীভাবে? উপায় বাতলে দিচ্ছেন খ্যাতিমান রন্ধনশিল্পী ফাতেমা আবেদীন।
এমনিতেই আমার পরিচিতজনেরা যখনই আমাকে দেখেন, সঙ্গে সঙ্গেই রেসিপির ফরমাইশ দেন। আলুর দমে আলু আগে দিতে হয়, না পটোল? লাউ শাক সবুজ রাখতে ফুড কালার দিতে হবে কি না—এমন সব প্রশ্ন। তবে ইলিশের কথা উঠলেই তাদের চোখ-মুখ কেমন যেন গম্ভীর হয়ে যায়। ইলিশের দামের কথা বললে তো অনেকেরই হার্ট অ্যাটাক হওয়ার জোগাড়।
শুনেছি ইলিশের কেজি ১,৫০০ থেকে ২,০০০ টাকা! কেউ কেউ আবার আমাকে বলেন, "ফাতেমা, ইলিশ তো ব্র্যান্ড! মাছের রাজা বলে কথা। তুমি যদি ইলিশ না কিনতে পারো, তাহলে পাঙাশ, কই, লইট্টা কেনো, বাধা কোথায়?" কথা একদম মিথ্যে না, ইলিশ মাছ একেবারে ব্র্যান্ডেড পণ্য। তবে আমার মতো গরিবের মন তো আর এভাবে বুঝিয়ে রাখা যায় না। তাই আজ শিখে নিন ইলিশ ছাড়া ইলিশ রান্নার মজার দুই পদ্ধতি।
### **ভেগান ইলিশ**
উপকরণ:
– আলু/কলা/মিষ্টিকুমড়া—যেটা খুশি নিতে পারেন। সুবিধার্থে আমি আলু নিচ্ছি।
– লবণ, চিনি, তেল, মসলা—এগুলোও আপনার খুশিমতো।
প্রণালি:
প্রথমে ভালো করে আলু সেদ্ধ করে ভর্তা করুন। তারপর মসলা মেখে সেই ভর্তাটাকে ইলিশ মাছের আকার দিন। ইলিশের আকৃতি দিতে না পারলে, পাশের বাসার শিশুদের সাহায্য নিন। তারা বেশ মজা পাবে। এরপর তাওয়ায় প্রচুর তেল দিয়ে সেই ইলিশের ভাস্কর্য ভেজে নিন। তারপর শুকনো মরিচ ভেজে পেঁয়াজ বেরেস্তা দিয়ে পরিবেশন করুন। হ্যাঁ, ইলিশের স্বাদ না হোক, রূপটা তো কিছুটা পাবেন!
বিশেষ পরামর্শ: যদি সম্ভব হয়, মাছ বিক্রেতার হাতে-পায়ে ধরে খানিকটা ‘ইলিশ ধোয়া পানি’ নিয়ে আসুন। আলু ওই পানিতে ধুয়ে নিলে হয়তো ইলিশের একটু গন্ধও পেতে পারেন। তবে মাছ ধোয়া পানি বিনা মূল্যে পাবেন কি না, সে বিষয়ে নিশ্চয়তা দিতে পারছি না!
### **থ্রিডি ইলিশ**
এই ইলিশ বানাতে পারলে আপনি আধুনিক যুগের রান্নাবিদদের মধ্যে সেরা হয়ে যাবেন। আর আপনাকে ‘ফিউচারিস্টিক ফুড গুরু’ হিসেবেও ডাকা হবে!
উপকরণ:
১. ওয়াকম (ডিজিটাল আঁকিবুঁকি করার যন্ত্র)—১টি।
২. থ্রিডি প্রিন্টার—১টি। (সোজা কথা, যদি আপনার পকেটে ওয়াকম বা প্রিন্টার না থাকে, তাহলে ধার করে নিন।)
প্রণালি:
প্রথমে ওয়াকম হাতে তুলে নিন, যেন এটা আপনার রন্ধন যন্ত্রের মতো। এরপর চটপট একটা ইলিশ মাছ এঁকে ফেলুন। পদ্মার ইলিশ হবে, না মেঘনার, সেটা আপনার ইচ্ছা। ডিমসহ ইলিশ আঁকবেন, না ডিম ছাড়া, তা–ও সম্পূর্ণ আপনার সিদ্ধান্ত। আঁকা শেষ হলে সেই ছবিটা থ্রিডি প্রিন্টারে প্রিন্ট করে ফেলুন। শর্ষে ইলিশ খেতে চাইলে ইলিশের গায়ে হলুদ রং আর কাঁচা মরিচের সবুজ রং দিয়ে সাজিয়ে তুলুন।
বিশেষ সতর্কতা: ভালো মানের কাগজে প্রিন্ট করুন। খারাপ কাগজে প্রিন্ট করলে স্বাদ মাটি হয়ে যেতে পারে। আর খেতে বসার সময় মনে রাখবেন, হজমের জন্য একটুখানি পানি রাখলে ভালো হয়।
এখন থেকে ইলিশ কিনতে না পারলেও সমস্যা নেই, ইলিশের রেসিপি তো হাতে রইল!