রেমিট্যান্সের প্রবাহে চাঙ্গা হচ্ছে ডলার বাজার


সরকারের বকেয়া আমদানি বিল সম্পূর্ণভাবে পরিশোধ করলে আন্তঃব্যাংক বাজার পুরোপুরি স্বাভাবিক হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ছবি: সংগৃহীত


দেশের ডলার বাজার দীর্ঘদিন ধরে সংকটের মুখে ছিল, যার প্রধান কারণ ছিল উচ্চ আমদানি ব্যয়, প্রত্যাশার তুলনায় কম রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং ক্রমাগত হ্রাস পাওয়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। আন্তঃব্যাংক মুদ্রার বাজারে ডলারের চাহিদা ও সংকটের কারণে লেনদেন স্বাভাবিক ছিল না। তবে সাম্প্রতিক কিছু নীতিগত পরিবর্তন এবং বাড়তি রেমিট্যান্সের কারণে এই চিত্র ধীরে ধীরে পাল্টাতে শুরু করেছে।


ডলার সংকটের কারণ ও পরিবর্তনের সূচনা: 

উচ্চ আমদানি খরচ এবং প্রত্যাশার তুলনায় কম রেমিট্যান্স প্রবাহের কারণে দেশের ডলার বাজার সংকটে পড়ে। এর ফলে ব্যাংকগুলোর মধ্যে ডলার লেনদেন কঠিন হয়ে পড়ে, এবং ডলারের সংকট আরও বাড়তে থাকে। তবে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রলিং পেগ এক্সচেঞ্জ রেট নীতি এবং অন্যান্য উদ্যোগের মাধ্যমে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হতে শুরু করেছে।


রেমিট্যান্স বৃদ্ধির প্রভাব

গত জুলাই মাসে রেমিট্যান্সের প্রবাহ ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে গেলেও, আগস্ট মাসে তা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। রেমিট্যান্স প্রবাহ আগের মাসের তুলনায় ১৬.১০ শতাংশ বেড়ে ২.২ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই বৃদ্ধি আন্তঃব্যাংক মুদ্রার বাজারে ডলারের চাহিদা মেটাতে সহায়ক হচ্ছে এবং সংকট কমাতে বড় ভূমিকা রাখছে।


কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিগত পরিবর্তন

বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু নীতি যেমন ক্রলিং পেগ এক্সচেঞ্জ রেটের প্রবর্তন ডলার সংকট মোকাবেলায় সহায়ক হয়েছে। এই নীতির মাধ্যমে ডলার বিনিময় হার বাজার পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে পরিবর্তিত হয়, যা বাজারকে স্থিতিশীল করতে সাহায্য করেছে। 


ব্র্যাক ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান মো. শাহীন ইকবাল বলেন, "রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ফলে আন্তঃব্যাংক ডলার বাজার এখন অনেক বেশি স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। ডলার সংকট কমে আসছে এবং ব্যাংকগুলো আরও সহজে লেনদেন করতে পারছে।"


বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের বর্তমান অবস্থা 

রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে প্রথম ১৪ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১.১৭ বিলিয়ন ডলার। এর ফলে বাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়ছে, যা ডলার সংকট কাটিয়ে উঠতে সহায়ক হচ্ছে।


ব্যাংকিং খাতের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া

ব্যাংকগুলোতে ডলার লেনদেন আগের তুলনায় সহজ হয়ে উঠছে। উদাহরণস্বরূপ, কৃষি ব্যাংকের মতো যেসব ব্যাংক প্রচুর রেমিট্যান্স পায় কিন্তু আমদানি বিলের চাপে থাকে না, তারা আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলার সরবরাহ করছে। এর ফলে অন্যান্য ব্যাংকগুলোর ওপর চাপ কমেছে এবং ডলারের লেনদেন আরও সহজ হয়েছে


মুদ্রা বাজারে দাম ও লেনদেন 

বর্তমানে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম ১১৮ থেকে ১২০ টাকা এবং খোলাবাজারে ১২০ থেকে ১২১ টাকার মধ্যে রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, ডলার লেনদেন স্বাভাবিক থাকলে এই দামের পার্থক্য আরও কমবে। প্রতিদিন আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ৩০ থেকে ৯০ মিলিয়ন ডলারের লেনদেন হচ্ছে, যা সংকটের সময়ের তুলনায় অনেক বেশি।


সংকট নিরসনে সম্ভাব্য পদক্ষেপ

সরকারের বকেয়া আমদানি বিল পরিশোধ করা হলে এবং ব্যাংকিং খাতের অন্যান্য সংস্কার কার্যকর হলে ডলার বাজার পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Post a Comment

Previous Post Next Post