যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ‘সেভেন সিস্টার্স’

 যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ‘সেভেন সিস্টার্স’ প্রভাব: এক বিশ্লেষণ


যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে ‘সেভেন সিস্টার্স’ নামে পরিচিত এক বিশেষ প্রভাবশালী গ্রুপ রয়েছে, যা দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং রাজনীতির ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। ‘সেভেন সিস্টার্স’ হলো যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং সম্পদশালী বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সমষ্টি, যাদের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা সরকারি, বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করে আসছেন।


‘সেভেন সিস্টার্স’ কি?


‘সেভেন সিস্টার্স’ নামটি প্রথমে ১৯২৭ সালে প্রাচীন এবং প্রভাবশালী সাতটি নারী-শিক্ষাবিষয়ক কলেজের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। এই সাতটি কলেজ হলো:


1. Barnard College

2. Bryn Mawr College

3. Mount Holyoke College

4. Radcliffe College (বর্তমানে হার্ভার্ডের অংশ)

5. Smith College

6. Vassar College (বর্তমানে যৌথ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান)

7. Wellesley College

এই কলেজগুলো উচ্চ মানের শিক্ষা এবং রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নেতৃত্ব তৈরির জন্য খ্যাত। বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে, তাদের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে আসছেন।


নির্বাচনে প্রভাব


যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ‘সেভেন সিস্টার্স’ এর প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে রয়েছে, যার ফলে তারা নির্বাচনের ফলাফলের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটন (Wellesley College-এর প্রাক্তন শিক্ষার্থী) ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী ছিলেন। তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ও নেতৃত্বের গুণাবলি গঠনে সেভেন সিস্টার্স-এর শিক্ষার প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাছাড়া বিভিন্ন উচ্চস্তরের রাজনৈতিক ক্যাম্পেইন এবং নির্বাচনী কৌশলে এই কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।

মিডিয়া এবং প্রচারণা


নির্বাচনে ‘সেভেন সিস্টার্স’ প্রভাব আরও স্পষ্ট হয় যখন দেখা যায় এই কলেজগুলোর প্রাক্তনীরা মূলধারার মিডিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তারা নির্বাচনী প্রচারণা, সংবাদ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যমে কৌশলগতভাবে প্রভাব ফেলে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, এসব প্রভাবশালী নারী নেত্রীদের নীতি এবং দৃষ্টিভঙ্গি নির্বাচনের ফলাফলে বিশেষ প্রভাব ফেলে।


সমালোচনা


তবে এই প্রভাব নিয়ে সমালোচনাও রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন যে ‘সেভেন সিস্টার্স’ এর উচ্চশ্রেণির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হওয়ার কারণে তারা সমাজের অন্যান্য অংশের প্রতিনিধিত্ব করে না। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বৈচিত্র্য এবং গণতন্ত্রের মূলনীতি কিছুটা হ্রাস পায়। নির্বাচনে তাদের সম্পৃক্ততা এবং প্রভাব নিয়ে সমালোচকরা বলেন, এই প্রভাবশালী নেটওয়ার্কগুলির কারণে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলো সাধারণ মানুষের চেয়ে ধনীদের প্রভাব বেশি বহন করে।


উপসংহার


যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ‘সেভেন সিস্টার্স’ এর প্রভাব অস্বীকার করা যায় না। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ত্ব দিচ্ছেন এবং তাদের উপস্থিতি নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে রাজনৈতিক কৌশল পর্যন্ত সব জায়গায় ছড়িয়ে আছে। তবে এই প্রভাবের ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয় দিকই বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং গণতান্ত্রিক নির্বাচনী ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য সকল পক্ষের সমান সুযোগ থাকা প্রয়োজন।


Post a Comment

Previous Post Next Post