অধ্যাপক ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপে ফেলছে যেসব বিষয়

বাংলাদেশে অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের মাত্র দুই মাস পূর্ণ হওয়ার মধ্যেই সরকারের কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা তীব্র হয়ে উঠেছে। এসব সমালোচনা শুধু কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে সরকারের ওপর বহুমুখী চাপ সৃষ্টি করছে বলে মনে করেন অনেক পর্যবেক্ষক।



উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ইস্যু ও নতুন চ্যালেঞ্জ:


পর্যবেক্ষকদের মতে, কিছু সমস্যা বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে এসেছে, অন্যদিকে নতুন কিছু চ্যালেঞ্জও সরকারের জন্য সামনে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং বাজার সিন্ডিকেটের অনিয়ম নিয়ে কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে।


দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও বাজার সিন্ডিকেট:


ডিমের দাম ডজন প্রতি ২০ টাকা বৃদ্ধি পাওয়ার মতো উদাহরণ দিয়ে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন জানায়, বাজার থেকে ভোক্তাদের পকেট থেকে ২০ দিনে ২৮০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা যথেষ্ট নয়। মুশতাক খান সিন্ডিকেট ভাঙার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, "সিন্ডিকেটগুলো বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। এসব ভাঙতে হবে এবং তাদের অর্থে হস্তক্ষেপ করতে হবে।"


গার্মেন্টস খাতে অস্থিরতা:


গার্মেন্টস খাতেও অস্থিরতা বিদ্যমান, যেখানে শ্রমিকদের আন্দোলন এখনও বিক্ষিপ্তভাবে চলছে। বিশেষ করে গাজীপুর এলাকায় আন্দোলনের তীব্রতা বেশ প্রকট। বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি রুবানা হক বলেছেন, ক্রেতারা ইতোমধ্যে কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, ভারত, পাকিস্তান এমনকি মিয়ানমারে চলে যাচ্ছেন, যা বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাতের জন্য একটি বড় ধাক্কা।


আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি:


আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের জন্য গণপিটুনি এবং অন্যান্য অপরাধ দমনে কাজ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। গত ১০ অক্টোবর চাঁপাইনবাবগঞ্জে গণপিটুনিতে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রমাণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।


প্রশাসনে অস্থিরতা:


জনপ্রশাসনে অস্থিরতা এবং পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে। জেলা প্রশাসক নিয়োগে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ নিয়ে সংবাদমাধ্যমগুলোতে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এর ফলে প্রশাসনের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে।

রাজনৈতিক বিতর্ক:


অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বিতর্কও ক্রমশ বেড়ে চলেছে। নিউ ইয়র্ক সফরে অধ্যাপক ইউনূসের কিছু বক্তব্য এবং ‘রিসেট বাটন’ সম্পর্কিত তার মন্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই ফেসবুকে হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে ‘স্টেপ ডাউন ইউনূস’ আন্দোলন চালাচ্ছেন।


সড়কে বিশৃঙ্খলা:


ঢাকার যানজট পরিস্থিতি নিয়েও জনগণের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। অধ্যাপক ইউনূস যানজট নিরসনে দ্রুত কার্যকর সমাধানের জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ দিয়েছেন, তবে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি দেখা যায়নি।


দ্রুত পদক্ষেপের প্রয়োজন:


লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজের অধ্যাপক মুশতাক খান  মনে করেন, সরকারের দ্রুত কিছু বড় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। দুর্নীতি এবং অর্থপাচারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া এবং বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার জন্য সরকারের কার্যকরী পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। এছাড়া গণঅভ্যুত্থানের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব পালন নিয়ে প্রশ্ন ওঠায়, তাদের দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করারও দাবি উঠছে।


এভাবে, অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার নানা দিক থেকে চাপে রয়েছে, যার মধ্যে অর্থনৈতিক সংকট, প্রশাসনিক অস্থিরতা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক বিতর্ক প্রধান।


Post a Comment

Previous Post Next Post